কিছুদিন আগে, অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট বাংলাদেশ গ্রুপে একটি প্রশ্ন করেছিলাম।
প্রশ্ন অনেকটা এমন ছিল যে – “ধরুন, আপনি অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট নিয়ে সবে মাত্র জানতে শুরু করেছেন। আর আপনার কাছে সর্বসাকুল্যে আছে মোট ১০০ ডলার। এখন সেটাকে কিভাবে ইনভেস্ট করবেন। “
২০-৩০ জন এর উত্তর দেওয়ার পর আমি আমার মতামত দিবো ভাবছিলাম। কিন্তু আমার মতামত লিখতে গিয়ে মনে হল বিষয়টা অল্প কথায় হয়তো বোঝানো যাবেনা।
তাই চিন্তা করলাম এই ধরণের প্রশ্নতো কারও একার না। এখন হয়তো কয়েকজনের। কিছুদিন পর আরও মানুষের হতে পারে। তাই একটা বিস্তারিত আর্টিকেল লিখে ফেললেই বোধহয় ভালো হয়।
সেই চিন্তা থেকেই এই আর্টিকেল লেখা শুরু।
এখানে আমি যা বলবো তার সাথে অনেকেরই হয়তো দ্বিমত থাকতে পারে। তাই আপনার কোন ভিন্ন আইডিয়া থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্টে জানানোর জন্যে অনুরোধ করছি।
তো, প্রশ্নের খাতিরে ধরেই নিচ্ছি আমি মাত্র অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে জানতে শুরু করেছি। তাই এ সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নেই।
আমার প্রথম কাজ কি হবে?
এই মুহুর্তে আমি যদি টাকা ইনভেস্ট করে শেখার চিন্তা করি, তাহলে পুরো টাই বোকামি হয়ে যাবে।
কারণ আমি জানিনা আমার টাকা কোথায় ইনভেস্ট করতে হবে, কিভাবে ইনভেস্ট করতে হবে।
কার কাছে ইনভেস্ট করলে আমি স্টেপ বাই স্টেপ পুরো বিষয়টা শিখতে পারবো সেটাও আমার জানা নেই।
তাই এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে অনলাইনে ফ্রিতে যতো রিসোর্স আছে সেগুলো খুঁজে বের করা।
আর কোন কিছু শেখার জন্যে অবশ্যই ভিডিও অনেক সহজ একটি মাধ্যম। তাই অনেকেই প্রথম দিকে ভিডিও টিউটোরিয়ালের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
এর অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ আছে, তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে বেশিরভাগ এক্সপার্টরাই ভিডিও টিউটোরিয়ালের চেয়ে টেক্সট আর্টিকেল লিখতে বেশি পছন্দ করেন।
তাই আমি প্রথমে অনলাইনে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট নিয়ে যতো রকমের আর্টিকেল গুগলে সার্চ করে পাওয়া যায় একে একে সব পড়ার চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে এলোপাথাড়ি না পড়ে প্রথমে সবগুলা রিসোর্স স্প্রেডশিটে বা পছন্দসই মাধ্যমে সেইভ করে রাখবো। যাতে পরবর্তীতে আর রিসোর্স খোঁজার জন্যে আলাদা সময় ব্যয় করতে না হয়।
এক্ষেত্রে পকেট নামে খুব দারুণ একটি অ্যাপস আছে। ব্রাউজারে পকেটে ইউ আর এল সেইভ করে রাখলে সেটা আপনার অন্য ডিভাইস যেমন – ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে চলে আসবে।
এতে করে যখনই সময় হবে তখনই আপনি পকেট অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারছেন। এছাড়া বাসে ঝুলতে ঝুলতেও আর্টিকেল গুলো শেষ করতে পারেন।
ভাবছেন কিভাবে?
পকেটে টেক্সট টু স্পিচ সুবিধাও আছে। আপনি সেটার মাধ্যমে হেড-ফোন কানে দিয়ে ঝুলতে ঝুলতেই পুরো আর্টিকেলটা শুনে নিতে পারবেন।
হাতে ফ্রি সময় থাকলে একটানা যতো বেশি আর্টিকেল পড়া যায় ততোগুলো পড়ার চেষ্টা করবো। যদি সময়ের স্বল্পতা থাকে তাহলে প্রতিদিন ২-৩টা করে আর্টিকেল পড়লেও দেখা যাবে এক মাস শেষে আমি প্রায় ৫০-৬০টা আর্টিকেল পড়ে শেষ করেছি। আর পুরো বিষয়ের উপর অনেক ভালো একটা আইডিয়াও পেয়ে গিয়েছি।
আমার দ্বিতীয় কাজ কি হবে?
এখন যেহেতু আমি অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মূল বিষয় সম্পর্কে মোটামোটি আইডিয়া পেয়েছি এবার আমি চেষ্টা করবো ভিডিও টিউটোরিয়াল কি কি আছে সেগুলো দেখার।
যদিও ইউটিউবে পাওয়া সব টিউটোরিয়াল ওইভাবে দেখার যোগ্য না। তাই ভিডিও দেখার আগে এর থাম্বস আপ সংখ্যা, ভিউ কাউন্ট, পজিটিভ কমেন্ট দেখে সন্তোষজনক মনে হলে এরপরেই কেবল সেই ভিডিওটা দেখবো।
কারণ যার তার ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে মাথা নষ্ট করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
আর আমাদের দেশে অনেকেই অনলাইন মার্কেটিং নিয়ে বাংলায় ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করেন।
আমি সবাইকে বলছিনা, তবে ট্রাস্ট মি বেশিরভাগ টিউটোরিয়াল যারা তৈরি করে তাদের নিজেরই এই বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। তারা তাদের নিজেদের অনেক মনগড়া যুক্তি এবং ভুল ধারণা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেন নিজের অজান্তেই।
আর সেগুলো দেখে মাথা নষ্ট হয় সাধারণ মানুষের।
তাই প্রথম দিকে আমি ইংরেজিগুলোই দেখার চেষ্টা করবো। আর টুকটাক বাংলা টিউটোরিয়াল দেখার চেষ্টা করবো যা শিখছি তার সাথে মিল পাচ্ছি কিনা।
এভাবে প্রতিদিন ১-২টা করে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখার চেষ্টা করবো। আর এর ফাকে ফাকে আর্টিকেল পড়াও অব্যাহত রাখবো।
এভাবে ২ মাস পার হয়ে গেলে আমার খুব ভালো একটা গ্রিপ তৈরি হয়ে যাবে। এবার আমি জানি আমাকে শিখতে হবে
- কিভাবে লো কম্পিটিশন কিওয়ার্ড বের করতে হয়
- ম্যানুয়ালি কিভাবে কম্পিটিশন চেক করতে হয়
- বেসিক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- সঠিক ডোমেইন এবং হোস্টিং নির্বাচন করা
- ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়
- আর্টিকেল কিভাবে নিজে লেখা যায়/লিখিয়ে নেয়া যায়
- লিঙ্ক বিল্ডিং কিভাবে করা দরকার এবং কতোটুকু করা দরকার
এই পর্যন্ত যদি পড়ে থাকেন তাহলে আমার মতোই আপনি অলরেডি জেনে গেছেন নিশ সাইট তৈরির আগে আপনাকে ঠিক কি কি বিষয় শিখতে হবে।
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, আমি আগেই উল্লেখ করেছি আমাদের বাজেট ১০০ ডলার। তাই চাইলেও আমরা অনেক পেইড জিনিস নিতে পারবোনা।
আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে কিভাবে বিনামূল্যে/অল্প-মূল্যে সে কাজটা করে নেয়া যায়।
যেমন- নিশ সাইট শুরু করার সময় সবারই একটা কমন চিন্তা-ভাবনা থাকে যে লং টেইল প্রো কিনতে হবে। কিন্তু আমার মতে নবীন হিসেবে প্রথমেই কিনে নেয়া উচিৎ হবেনা।
লং টেইল প্রো দিয়ে যা যা করা যায় ঠিক তাই আপনি ম্যানুয়ালিও করতে পারবেন। শুধু সময়টাই একটু বেশি লাগবে। সময় হলে এ বিষয়ের উপর বিস্তারিত পোস্ট লেখার চেষ্টা করবো।
লং টেইল প্রো নিয়ে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট বাংলাদেশ গ্রুপে একটি পোস্ট করেছিলাম। সেটা হুবহু তুলে দিচ্ছি –
অনেকেরই দেখলাম লং টেইল প্রো সহ বিভিন্ন পেইড সফটওয়্যারে আগ্রহ আছে। এটা খারাপ না।
তবে হুট-হাট ইনভেস্ট না করাই ভালো। আপনাকে যদি আজকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ফটোশপের লাইসেন্স কিনে দেয়া হয় আর আপনি যদি সেটা ব্যবহার করতে না জানেন তাহলে বেনেফিট কিন্তু ০।
তাই আগে ম্যানুয়াল প্রসেসগুলো শিখুন, পড়াশোনা করুন। একটা সময় পর বুঝতে পারবেন কোনটা আসলে আপনার দরকার আর কোনটা আপনার দরকার নেই।
আমি কিওয়ার্ড রিসার্চের বিভিন্ন কাজ করেছি আজ ৭ বছরের কিছু বেশি হলো, ট্রাস্ট মি আমি হঠাৎ ছাড়া কোন পেইড টুল ইউজ করিনি। আমার মনে হয়নি যে আমার দরকার আছে।
এখন ব্যবহার করি তাও শুধু কিছুটা সময় বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু ঘুরেফিরে চিরচেনা গুগলের কিওয়ার্ড প্ল্যানারের কাছেই যেতে হয়।
তো যারা লং টেইল প্রো কেনার কথা ভাবছেন, তাদেরকে অনুৎসাহিত করবোনা। তবে কেনার আগে গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন, কিভাবে এটাকে ব্যবহার করেই লং টেইল কিওয়ার্ড বের করা যায়, শিখে নিন।
এরপর ম্যানুয়াল কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস কিভাবে করতে হয় সেটা শিখে নিন। এগুলাতে ঝানু হয়ে যাওয়ার পরেও যদি আপনার মনে হয় আপনার পেইড টুল লাগবে, তখন নিতে পারেন। তার আগে না নেয়াই ভালো।
আমাকে এই মুহূর্তে যা যা শিখতে হবে এর জন্যে কারও কাছ থেকে একটা প্রোপার গাইডলাইন পেলে আমার জন্যে ভালো হবে।
তাই খুব ভালোভাবে সুন্দর করে কোন বড় ভাই/ অভিজ্ঞ কাউকে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনার রিকোয়েস্ট করবো।
তাই বলে এইটা বলবনা যে “ভাই আমাকে একটা লো কম্পিটিশন একটা কিওয়ার্ড বের করে দেন”। :p
আমার প্রশ্নগুলো হবে খুব স্পেসিফিক।
যেমন বেসিক এসইও শেখার জন্যে ভালো কোন রিসোর্স আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে আমাকে শেয়ার করতে বলবো। তবে এক্ষেত্রে কোন পেইড কোর্স আমাকে ফ্রিতে দেয়ার কথা নিশ্চয়ই বলবনা। কারণ সেটা অনৈতিক।
শুধু ফ্রি রিসোর্স যা আছে সেগুলোই দিতে বলবো অথবা সংক্ষেপে দিক নির্দেশনা দিতে বলবো।
এক্ষেত্রে অনেকেরই মাথায় আসবে যে প্রথমেই কেন কোন অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে দিক নির্দেশনা চাইলাম না।
আমি চাইলাম না কারণ হচ্ছে, আমি যখন কিছুই জানিনা তখন আমি গঠনমূলক প্রশ্ন করতে পারবোনা। এমনকি কি প্রশ্ন করতে হবে সেটাও আমার জানা থাকার কথা না।
তাই আমরা আগে একটা ফাউন্ডেশন দ্বার করিয়ে নিয়েছি নিজেদের। এরপর সেটার উপর ভিত্তি করে স্পেসিফিক প্রশ্ন করবো।
এরপর অভিজ্ঞদের দেয়া লিঙ্ক/ ডিরেকশন অনুযায়ী স্টাডি করবো যতদিন না খুব ভালো একটা আইডিয়া তৈরি হচ্ছে।
এরপর একে একে বাকি বিষয়গুলোও শিখে নিবো।
সবগুলো বিষয় শেখার পর আমি নিজে থেকেই বুঝতে পারবো যে এবার আমি কাজ করার জন্যে যোগ্য কি না। অভার কনফিডেন্ট হয়ে কাজ শুরু না করে দিয়ে আসলেই যৌক্তিকভাবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে।
যদি মনে হয় এবার কারও পার্সোনাল এসিস্ট্যান্স আমার খুব দরকার তাহলে অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে কোন পেইড কোর্স কিনবো ৫০-৬০ ডলারের মধ্যে।
অথবা অভিজ্ঞ কেউ যদি পার্সোনালি ট্রেনিং দিতে রাজি হয় ওই বাজেটে তাহলে তার কাছ থেকে শিখে নিবো।
যদি এমন হয় যে আমার বাজেটে কারও পক্ষে ওইভাবে সবগুলো বিষয় শেখানো সম্ভব না, তাহলে যেগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা তুলনামূলক কম পরিষ্কার শুধু সেই বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করবো।
তবে কেউ যদি টাকা বেশি চায় সেক্ষেত্রে তাকে উলটাপালটা ভাবার কোন দরকার নেই। কারণ একজন মানুষ তার প্রফেশনাল লাইফে নানা কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সে ব্যস্ত সময়ের জন্যে যদি কেউ আমাকে শিখানোর জন্যে সময় বের করে তাহলে অবশ্যই তার সঠিক মূল্যায়ন আমাকে করতে হবে।
কারণ সে হয়তো ঐ সময়টা আমাকে না শিখিয়ে নিজে কাজ করলে এর থেকেও বেশি পয়সা পেতে পারতো।
যাই হোক গুণীজনের মূল্যায়ন অবশ্যই করতে হবে।
আর আমি যেহেতু ইংরেজিতে মোটামোটি ভালো তাই আমার আর্টিকেল রাইটার হায়ার করার প্রয়োজন পড়বেনা। আমি নিজেই আমার আর্টিকেলগুলো লিখে নিবো।
তাই যাদের বাজেট কম তারা যদি নিজে ইংরেজিতে দক্ষ থাকি তাহলে তো মাশাআল্লাহ অনেক ভালো আপনার জন্যে। আর যদি ইংরেজিতে দুর্বল হই, তাহলে ইংরেজি রাইটিং এর উপরও আমাকে দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করে দুর্বলতা কাটিয়ে নিতে হবে।
আর্টিকেল আমি নিজে লিখি অথবা কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নেই (বাজেট থাকলে) যাই করিনা কেন অবশ্যই ইংরেজির উপর খুব ভালো একটা গ্রিপ থাকতে হবে।
কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিলেও সে আমাকে ঠিক কি কোয়ালিটি আর্টিকেল দিচ্ছে সেটা যাচাই করার জন্যেও যথেষ্ট ভালো ইংরেজির দক্ষতা থাকতে হবে।
তাই অবশ্যই ইংরেজির উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে।
যারা নিজেরা আর্টিকেল লিখতে চান তারা আল-আমিন ভাইয়ের এই আর্টিকেলটা ফলো করতে পারেন।
এভাবে ধীরে ধীরে ৪-৬ মাস একটানা নিশ সাইট কেস স্টাডি করার পর আমি বুঝবো আমার কোন পথে আগানো উচিৎ এবং কিভাবে আগানো উচিৎ।
যেহেতু অলরেডি আমি ৫০ ডলার শেখার পেছনে খরচ করেছি, তাই আমার কাছে আর মাত্র ৫০ ডলার আছে। যা আমি ডোমেইন, হোস্টিং এবং লোগো ডিজাইনের পেছনে খরচ করবো।
আশা করি এবার আমি আমার কাঙ্ক্ষিত নিশ সাইট তৈরি শুরু করতে পারবো।
এবার নিশ সাইট নিয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন কমেন্টে জানাতে পারেন। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে আমার কাছ থেকে কোন কোন বিষয়ের উপর আর্টিকেল দেখতে চান সেটাও জানাবেন।