বিদেশি মার্কেটারদের নিশ সাইট প্রজেক্টতো অনেক পড়ছেন। অনেক কিছু শিখেছেনও নিশ্চয়ই। তো বাংলাতেও পূর্নাংগ একটা নিশ সাইট প্রজেক্ট এর বেসিক অংশগুলো স্টেপ বাই স্টেপ দেখানো গেলে অনেকেরই উপকার হবে।
এমনটা আশা করেই আমি নিশ সাইট স্টার্ট আপ ১ শুরু করলাম। যারা প্রথম পর্বটি মিস করেছেন তাদের জন্য দেওয়া হলোঃ নিশ সাইট ডেভেলপমেন্ট পর্ব ০১ – নিশ সাইট বাজেট
এক্ষেত্রে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, আমি নিশ সাইট প্রজেক্টের মধ্যে আমার নিশ নিয়ে আলোচনার চেয়ে সে সম্পর্কিত বিষয়গুলোই শিখানো চেষ্টা করবো বেশি। যেমন এই আর্টিকেলে নিশ সিলেকশন কি, কিভাবে নিশ আইডিয়া পাওয়া যায় ইত্যাদি অংশ আমার নিশ সাইটের সাথে সম্পর্কিত না হলেও যারা নতুন জানতে শুরু করেছেন বিষয়টি তাদের জন্যে কিছুটা আলোচনা করেছি, আশা করি হেল্পফুল হবে।
এটি একটি বড় বাজেটের নিশ সাইট প্রজেক্ট। তবে যাদের বাজেট কম, তাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
সবার জন্যে শেখার কিছু না কিছু থাকবে। শুধু আপনার মনোযোগটা দিতে হবে।
আরেকটি বিষয়, এই নিশ সাইট প্রজেক্ট কোনভাবেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত না। কারও কাছ থেকে ২ পয়সা নেয়ার কোন ফন্দি-ফিকির বা ধান্দাও না। কেউ এমন ধারণা করে থাকলে তার জন্যে রইলো সমবেদনা।
আমি আমার নিশটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবোনা, কিন্তু নিশ সিলেকশন প্রসেস, ডোমেইন-হোস্টিং, কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি থেকে শুরু করে বেশ কিছু টিপস, ট্রিকস শেয়ার করবো।
যাতে করে নিশ সাইট তৈরি করার ক্ষেত্রে যতোটুকু ধারণা না হলেই না, তার কিছুটা পান।
অনেকক্ষেত্রে আমি নিজে কোন বিষয় আলোচনা না করে ভালো রিসোর্স এর লিংক দিয়ে দিতে পারি, সেক্ষেত্রে সেটা থেকেও উপকৃত হবেন।
পুরো প্রজেক্ট আর্টিকেল আকারে লেখাটা অনেকটাই নির্ভর করে আপনাদের রেসপন্স এর উপর। যদি ভালো রেসপন্স পাই অবশ্যই কন্টিনিউ করবো।
*সাইটটির নিশ, ডোমেইন-হোস্টিং সহ বেশ কিছু আর্টিকেলও ইতোমধ্যে পোস্ট করা হয়ে গিয়েছে। প্রথমে এমন কিছু লিখবো ভাবিনি। মিনহাজ ভাই একবার বললেন এমন কিছু লিখলে নাকি উপকার হবে অনেকেরই। তাই ভেবে শুরু করা।
নিশ সিলেকশন কি?
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিশ সিলেকশন। একটি সাইটের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সেটি সফলতার মুখ দেখবে কি বিফলে যাবে তার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে এর উপর।
তাই, যেনতেন ভাবে একটা সিলেক্ট করে নিলেই হবেনা।
নিশ এর কম্পিটিশন কেমন, আর্নিং পটেনশিয়াল কেমন ইত্যাদি যেমন দেখতে হবে তেমনই দেখতে হবে আপনার বাজেট অনুযায়ী নিশটিতে কাজ করার সুযোগ কেমন রয়েছে।
নিশ সিলেকশন মানেই হচ্ছে সেই নিশের মধ্যে কাজ করার জন্যে ভালো ভালো কিওয়ার্ডগুলো খুঁজে বের করা। আর ২০০৯ থেকে এসইওর কাজ করার সুবাদে এই কিওয়ার্ড রিসার্চটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ।
কিওয়ার্ড রিসার্চ হচ্ছে গুগল এর মতো সার্চ ইঞ্জিনে মানুষ যেসব বিষয় খোঁজে সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্য সার্চ টার্ম/কিওয়ার্ড বের করা। অর্থাৎ মানুষ সার্চ ইঞ্জিনে যা খোঁজে তাই কিওয়ার্ড আর সেগুলো থেকে কাজ করার মতো গুলো বাছাই করাই হলো কিওয়ার্ড রিসার্চ।
যদি শুধু কিওয়ার্ড করেই নিশ সাইট তৈরি করা যেত তাহলে আমি কম বেশি প্রতিদিনই কয়েকটা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারতাম।
অর্থাৎ নিশ সিলেকশন হচ্ছে কিওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে কাজ করার উপযুক্ত নিশ বাছাই করা।
কিভাবে নিশ আইডিয়া পাওয়া যায়?
সাধারণত নিশ আইডিয়া পাওয়ার জন্যে প্রথমেই মানুষ অ্যামাজনে যায়, এরপর সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে পছন্দের কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল দিয়ে কিওয়ার্ড বের করে।
অনেকেই আমাকে কিওয়ার্ড এর স্ক্রিনশট দিয়ে জানতে চান সেই কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করা যাবে কিনা।
এর মধ্যে একই কিওয়ার্ড আমি একাধিকবার পেয়েছি এমন ঘটনাও আছে। আমার কাছে যারা তাদের কিওয়ার্ডগুলো শেয়ার করেন তাদের কিওয়ার্ডগুলো থেকে একটা বিষয় খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়।
সেটা হচ্ছে, মানুষজন সাধারণত কমন বিষয় নিয়েই ঘাটাঘাটি করে।
নিজের কমফোর্ট জোনের বাহিরে গিয়ে এক্সট্রা মাইল খুব কম মানুষই যান।
এতোটুকু মাথায় রাখবেন সহজেই যে নিশগুলোতে আপনি যেতে পারছেন সেগুলো অনেকেই ইতোমধ্যে বের করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাই একটু আনকমন বিষয়গুলো বের করার চেষ্টা করুন।
উদাহরণ – আপনার মাথায় হয়তো টিভি বিক্রি করার চিনা আসতে পারে। কিন্তু, খুব কম মানুষের মাথাতেই টিভি এন্টেনা, টিভি টিউনার, টিভি ক্যাপচার কার্ড এর চিন্তা আসবে। আর যারা এই “একটু ভিন্ন” ভেবেছেন তারাই ভালো কিছু করতে পারবেন।
তাই প্রথম থেকেই একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে কাজ করতে হবে।
তবে এই ভিন্ন চিন্তা কিন্তু এমনি এমনিই আসবেনা।
আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি কার্যকর মনে হয়, সেটি হচ্ছে নতুনকে জানার ইচ্ছা। আপনি যদি আমার মতো প্রতিদিনই একটি নতুন বিষয় জানার আগ্রহ রেখে থাকেন, তাহলে আপনিও ভিন্ন ভিন্ন নিশ আইডিয়া পেতে পারবেন।
কম বেশি প্রতিদিনই একটি নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন। তবে সেটা যেনতেন ভাবে না করে একটু ডিপলি করতে হবে। ধরুন, আপনি টিভি নিয়েই আজকে ঘাঁটলেন, সারাদিন পড়াশোনা করলেন এ নিয়ে। দিন শেষে আপনি যেমন টিভি সম্পর্কিত প্রায় অনেক তথ্যই আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেন; পাশাপাশি নতুন নিশ সম্পর্কেও আইডিয়া পাবেন। যেমনটি আমি বললাম টিভি এন্টেনা, টিভি টিউনার, টিভি ক্যাপচার কার্ড ইত্যাদি।
তাছাড়া অ্যামাজনের মতো বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট ব্রাউজ করেও ভালো ভালো নিশ আইডিয়া পাওয়া যায়।
আমি কিভাবে নিশ সিলেকশন করলাম?
নতুন নিশ নিয়ে কাজ করার আগেই আমি মনের মধ্যে একটা মাল্টি নিশ সাইট দাঁড় করানোর চিন্তা-ভাবনা করে রেখেছিলাম। তাই শুধু মাত্র একটা দুইটা কিওয়ার্ড পেলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।
আমাকে পেতে হবে অনেকগুলো বায়িং কিওয়ার্ড একই ব্রড নিশ এর মধ্যে, যেগুলোকে টার্গেট করে একটা মাল্টি-নিশ সাইট দাঁড় করানো যেতে পারে।
২০০৯ সাল থেকে এসইওর সাথে জড়িত, প্রথম দিকে কিওয়ার্ড রিসার্চই ছিল আমার কাছে অন্যতম বিরক্তিকর কাজ। কিন্তু ধীরে ধীরে এই কিওয়ার্ড রিসার্চই হয়ে উঠেছে আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ।
আমি এর মতো আনন্দ অন্য খুব কম কিছু করেই পাই।
আর আমি একদিন-দুইদিন ঘেঁটে কিছু কাজ করার মতো কিওয়ার্ড পেলাম এবং কাজ শুরু করে দিলাম এই চিন্তা-ভাবনায় বিশ্বাসী না।
আমি যদি আজকে ভালো কিছু কিওয়ার্ড পাই, সবগুলো নোট ডাউন করে করে রাখবো। আরও ডিপে যাবো। যখন ক্লান্তি চলে আসবে সেইদিনের মতো কাজ ইস্তফা দিবো। একদিন-দুইদিন পর আবার একই নিশ নিয়ে ঘাঁটবো। ডিপে যাবো। আজকেও দেখা যাবে এমন কিছু দারুণ কিওয়ার্ড পেলাম যেটা আগের দিন পাইনি। এভাবে করে আমি ১-২ সপ্তাহ ঘেঁটে কাজ করা যায় এমন প্রায় সবগুলো কিওয়ার্ডই খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। এতে করে দিনশেষে আমার কম্পিটিটরদের তুলনায় নিশটিতে সফল হওয়ার জন্যে যথেষ্ট বায়িং কিওয়ার্ড আমার কাছে চলে আসবে।
নিশ এ কাজ করার জন্যে যা যা পেলাম –
অনেকগুলো ভালো সার্চ ভলিউমের বায়িং কিওয়ার্ড
এর মধ্যে একদম পানি ভাতের মতো সহজ কিওয়ার্ড যেমন আছে, তেমনই কঠিন কিওয়ার্ডও আছে। প্রথমেই আমি চেষ্টা করবো সহজ কিওয়ার্ডগুলো নিয়ে র্যাংক করার জন্যে। একটা ভালো পজিশনে চলে আসলে কঠিন কিন্তু দারুণ আর্নিং পটেনশিয়াল সম্পর্কিত কিওয়ার্ডগুলো নিয়ে কাজ করবো।
ওগুলো খুব একটা সহজ হবেনা আমার জন্যে, কারণ শুধু কিওয়ার্ডকে বেইজড করেই একাধিক নিশ সাইট অলরেডি আছে।
কিন্তু আমার প্রায় ৭ বছরের এসইও অভিজ্ঞতা বলে এদেরকে পেছনে ফেলে র্যাংক করা সম্ভব আল্লাহ চাইলে।
প্রোডাক্ট রিভিউ কিওয়ার্ড
আমার নিশটিতে আমি কাজ করার জন্যে অসংখ্য প্রোডাক্ট রিভিউ কিওয়ার্ড পেয়েছি। এক সময় বিরক্ত হয়ে এক্সেলে ডাটা এন্ট্রিই বন্ধ করে দিয়েছিলাম যে এতো কিওয়ার্ড কেন 😛
কিডিং… সবকিছুরই একটা সীমা আছে। এই প্রোডাক্ট রিভিউ কিওয়ার্ডেরও আছে। কিন্তু সীমা পর্যন্ত পৌছতে আর ইচ্ছা করেনি। তাই আপাতত ইস্তফা দিয়েছি।
অ্যামাজনে যতো প্রোডাক্ট আছে প্রায় সবগুলোর জন্যেই প্রোডাক্ট রিভিউ খোঁজা হয় অনলাইনে। আর এই প্রোডাক্ট রিভিউ কিওয়ার্ডগুলোর কনভার্সন সাধারণ বায়িং কিওয়ার্ডের চেয়েও বেশি। তাই অবশ্যই মেইন কিওয়ার্ড বের করার পর দেখবেন কাজ করার জন্যে প্রোডাক্ট রিভিউ কিওয়ার্ড কতোগুলো আছে।
যদিও এই ধরণের কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম অনেক কম, তাও এগুলোকে টার্গেট করে কাজ করলে ভালো সুবিধা করা যাবে।
প্রোডাক্ট প্রাইস
নিশটিতে স্বল্পমূল্যের প্রোডাক্ট যেমন আছে অনেক বেশি মূল্যের প্রোডাক্টই তেমনি আছে। মিনিমাম ৩৫ ডলার থেকে ম্যাক্সিমাম ২ হাজারও আছে। তবে গড় মূল্য ১৫০-৩০০।
নিশ সাইট বাজেট
সাধারণত একটি নিশ সাইট তৈরি করতে ৫০০-১০০০ ডলার এর প্রয়োজন হয়। যার মূল খরচটাই হচ্ছে কনটেন্ট। যেহেতু আমার সাইটটি অনেক বড় পরিসরে করার চিন্তা তাই আপাতত আমার বাজেট ১০,০০০ ডলার।
অনেকে ভাবছেন আমি একটি শূন্য বেশি দিয়ে ফেললাম কিনা। না। আমি শূন্য বেশি দেইনি। এই পুরোটাই আমার বাজেট।
আর এই বাজেটের সিংহভাগই খরচ হবে কনটেন্ট এর পিছনে আর লিংক বিল্ডিং এর জন্যে। লিংক বিল্ডিং এর জন্যে গেস্ট পোস্টিং আউট রিচের ক্ষেত্রে কিছু কোয়ালিটি কনটেন্ট (By Quality I meant QUALITY, not some cheap articles from iwriter or hirewriters)ও প্রয়োজন পড়বে।
গেস্ট পোস্টিং আউট রিচ এর পুরো প্রসেসটাই আমি আউটসোর্স করে দিবো। কাজটা বিরক্তিকর যখন দিনশেষে ১০০জনকে মেইল করলে ১০ জনও ঠিকমতো রিপ্লাই করেনা।
এইটুকুর জন্যেও আমার একটা বড় বাজেট লাগবে।
এই পুরো বাজেট টা আমি অল্প কিছুদিনে শেষ করে দিবোনা। দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রোপার প্ল্যানিং করে ধীরে ধীরে খরচ করবো যেখানে প্রয়োজন।
শেষ কথা
আগামী পর্বে আমি ডোমেইন সিলেকশন কিভাবে করলাম, কোথা থেকে হোস্টিং নিলাম এবং কেন নিলাম ইত্যাদি আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
আমি আজকে যতোগুলো বিষয় আলোচনা করলাম প্রায় প্রতিটি বিষয়ই আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করার দাবিদার। কিন্তু সময় স্বল্পতায় সব সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই মূল জুসটুকুই দেয়ার চেষ্টা করলাম।
কারও কোন বিষয়ে বুঝতে প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে করুন। আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিবো।
আর একটা কথা, শুধু নিজে নিজে শিখলেই তো হবেনা, অন্যকেও শেখার সুযোগ করে দিতে হবে। তাই কষ্ট করে নিজের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। যতো বেশি মানুষ পড়বে ততোই আমার আগ্রহ বাড়বে লেখার। আমার কাজটুকু-তো আমি করছি লিখে, এবার শেয়ার করে আপনারটুকুও করে নিন…..
…এবার কুইট্টালান।