নিশ সাইট ডেভেলপমেন্ট এর চতুর্থ পর্বে স্বাগতম। যারা আগের পর্ব মিস করেছেন তারা নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে পড়ে নিন।
- নিশ সাইট ডেভেলপমেন্ট পর্ব ০১ – নিশ সাইট বাজেট
- নিশ সাইট ডেভেলপমেন্ট পর্ব ০২ – নিশ সিলেকশন
- নিশ সাইট ডেভেলপমেন্ট পর্ব ০৩ – ডোমেইন ও হোস্টিং নির্বাচন
আজকের পর্বে আলোচনা করবো আমি আমার সাইট কোন থিম এবং প্লাগইন ব্যবহার করি এবং কেনো সেটা ব্যবহার করি। এর পাশাপাশি আপনাদের জন্যে আলাদা কিছু সাজেশনও দিবো, যাতে যারা পেইড এফোর্ড করতে পারবেন না তারাও যেন কাজ করতে পারেন।
তবে নতুন যে সাইটগুলো করবো, সেগুলোতে ভ্যারিয়েশন আনার চেষ্টা করবো, নির্দিষ্ট কোন থিমে আটকে না থেকে ভ্যারাইটিজ থিম ব্যবহার করবো। তারপরেও বেসিক বিষয়গুলো দিয়ে দিচ্ছি।
আশা করি, এতে মোটামোটি ভালো একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।
নিশ সাইটের জন্যে আমার পছন্দের থিমগুলো
ফোকাসব্লগ – থ্রাইভ থিমসের এই থিমটি একই সাথে লাইটওয়েট, এসইও ফ্রেন্ডলি এবং দৃষ্টিনন্দন। অতিমাত্রায় নান্দনিকতা নেই, তাই বেশ সিম্পল হলেও এটা আমার পছন্দের থিম। শুধু আমারই পছন্দের এমন না, আরও অনেকেই এই থিম পছন্দ করে। আর দেখতে দেখতে বিষয়টা এমন হয়ে যাচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে যারা অ্যামাজন নিশ সাইট তৈরি করছে তাদের জন্যে এটা জাতীয় থিমে পরিণত হয়ে গেছে। 😛
স্বাভাবিকভাবে আপনি যে সকল নিশ সাইট দেখতে পাবেন তার বেশিরভাগই গারবেজ টাইপ ডিজাইনে তৈরী। ভিজিটর যখন আপনার সাইটে আসবে সে যদি বাজে ডিজাইন দেখে খুব স্বাভাবিকভাবেই তার বিশ্বাস কমে যাবে আপনার রিকমেন্ডেশনের প্রতি।
কিন্তু, আপনার সাইটটি যদি হয় নজড়কারা তখন তার বিশ্বস্ততাও বেড়ে যাবে আপনার প্রতি।
আর সেটি ফোকাসব্লগ থিম দিয়ে নিঃসন্দেহে করা সম্ভব।
হুরে থিম – হুরে থিমটিও আমার বেশ পছন্দের। এর বেশ কিছু আলাদা ফাংশনালিটি আছে যেগুলো আমার ভালো লাগে। স্টিকি সাইডবার, ৪০টিরই বেশি বিল্ট ইন শর্ট কোড, এসইও ফ্রেন্ডলি ফিচারগুলো আমার পছন্দ।
তাছাড়া থিমটি দেখতেও সুন্দর। সাইটকে প্রফেশনাল লুক দিতে চাইলে এই থিমটি দারুণ হেল্প করবে।
স্কিমা মার্কআপ ব্যবহার করতে চাইলে পোস্টের প্লাগইন্স অংশে আমি একটি প্লাগইন সাজেস্ট করেছি, কিন্তু হুরে থিম ব্যবহার করলে আর সেই প্লাগইন ব্যবহার করার দরকার হবেনা। বিল্ট ইন ভাবেই স্কিমা ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া আলাদা কোন উইজেট প্লাগইন ব্যবহার করার প্রয়োজন হবেনা, কারণ এতে আছে ৩০টিরও বেশি বিল্ট ইন উইজেট।
নিজের ইচ্ছেমতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন অসাধারণ এই থিমটিকে।
জেনারেটপ্রেস – আল-আমিন ভাইয়ের কাছ থেকে প্রথম জেনারেটপ্রেসের কথা জানতে পারি, এর আগে এই থিম এর সাথে আমার পরিচয় ছিলোনা। এর দু’টো ভার্সন, একটা সাধারণ কিছু ফিচার নিয়ে ফ্রি আর আরও বেশি ফিচার নিয়ে প্রিমিয়াম।
নতুন যারা শুরু করবেন তারা জেনারেটপ্রেস এর ফ্রি ভার্সনটি ব্যবহার করেই অনায়াসে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
পয়েন্ট – আমার অন্যতম পছন্দের আরেকটি থিম, এটি সম্পূর্ণ ফ্রি। অথচ এর ফিচারগুলো অসাধারণ। বিল্ট ইন ভাবে প্রোডাক্টকে রেটিং দেয়ার ব্যবস্থা আছে, অ্যাডসেন্স বা অ্যামাজন সিপিএম অ্যাডস বসানোর জন্যে বিল্ট ইন ভাবেই অ্যাড ব্লক তৈরী করা আছে। তাছাড়া থিমটি এসইও ফ্রেন্ডলি।
আমার পছন্দের প্লাগইনগুলো
থ্রাইভ কন্টেন্ট বিল্ডার – নিশ সাইট তৈরী করতে গেলে এটি একটি সুইস নাইফ টুল বলতে পারেন। খুব সহজেই অসাধারণ প্রফেশনাল লুক দিতে থ্রাইভ কন্টেন্ট বিল্ডার এর তুলনা হয়না। এতে এমন দারুণ সব ফিচার আছে যেগুলো দিয়ে মাউসের কয়েক ক্লিকেই আর্টিকেলকে ফরম্যাটিং করা যায়।
ধরুণ, আমি প্রোস এবং কনস এর লিস্ট দিতে চাই। আমি নিচের ছবির মতো করে ফরম্যাটিং মাত্র কয়েক ক্লিকেই করতে পারি।
কিভাবে?
আমাকে মাত্র প্রথমবার এরকম করে একটা ফরম্যাট তৈরি করতে হয়েছে, এরপ সেটাকে সেইভ করে দিয়েছি।
এরপর থেকে প্রতিবার মাত্র দুই ক্লিকেই এটি তৈরী করে ফেলতে পারি। আলাদাভাবে তৈরি করতে হয়না সময় ব্যয় করে।
তাছাড়া কল টু একশন বাটনগুলোও আমার পছন্দ। একই সাথে ক্যাচি এবং দৃষ্টিনন্দন। সহজেই যা জনগণকে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কে ক্লিক করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে যে, থ্রাইভ কন্টেন্ট বিল্ডার ছাড়া সাইটে আর্টিকেল পাবলিশ করবো এমনটা ভাবতেও পারিনা। অনেকটাই ভাত খাওয়ার মতো হয়ে গেছে। খাবারের ক্ষেত্রে বাঙ্গালীর যেমন ভাত ছাড়া চলেই না, তেমনই নিশ সাইট তৈরী করতে গেলে আমার থ্রাইভ কন্টেন্ট বিল্ডার ছাড়া চলেই না।
কয়েকদিন ব্যবহার করুন, অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এরপর আপনারও এটি ছাড়া চলবেনা।
অল্প সময়ে প্রফেশনাল লুকিং একটা পেইজ দাঁড় করাতে চাইলে ভিজু্য্যাল এডিটরগুলোর মধ্যে থ্রাইভ অন্যতম শক্তিশালি একটী। খুবই দৃষ্টিনন্দনভাবে অল্প সময়ে সাজিয়ে ফেলা যায় এর মাধ্যমে।
ইজিঅ্যাজন – অ্যামাজন থেকে কোন ছবি আপনার সাইটে ব্যবহার করতে চাইলে আপনি সাধারণত কি করবেন? অ্যামাজনে যাবেন, ছবি ডাউনলোড করবেন, সেই ছবি আপনার সাইটে আপলোড করবেন, এরপর সেটাতে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক বসিয়ে দিবেন।
কম করে হলেও ৫-১০ মিনিটের কাজ এখানে।
কিন্তু পুরো কাজটাকে মাত্র ২০-৩০ সেকেন্ডেই করে ফেলতে পারবেন ইজিঅ্যাজন দিয়ে।
কিভাবে?
শুধু প্রোডাক্ট এর ইউনিক কোড বা প্রোডাক্টের নাম ইজিঅ্যাজনে দিবেন, প্রডাক্টের নামে ক্লিক করে আপনি ইমেইজ দিতে চাইলে সেটায় ক্লিক করলে আপনাকে ইমেইজগুলো দেখাবে। সেখান থেকে আপনার পছন্দের ইমেইজ প্রয়োজনীয় সাইজে ক্লিক করলেই কোড তৈরি হয়ে যাবে যেটা সাইটে দিয়ে দিলে ছবিসহ অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক অটো জেনারেট হয়ে যাবে।
খুব সহজ না?
এই কারণেই ইজিঅ্যাজন আমার কাছে অসাধারণ লাগে।
আর টেক্সট লিঙ্ক, বাটন, স্পেসিফিকেশন বক্স তৈরি করতেও খুব কাজে আসবে। ঘন ঘন অ্যামাজনে গিয়ে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক তৈরি করার প্রয়োজন আর পরবেনা। মাত্র কয়েক ক্লিকেই সেটি তৈরী করে নিতে পারবেন।
গ্রামারলি – আর্টিকেল লিখলে সেখানে বানান ভুল সহ গ্রামাটিকাল যেকোনো ভুল থাকা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেগুলো খালি চোখে অনেক সময় চোখে নাও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রামারলি পুরো কাজটাকেই সহজ করে দেয়।
আপনার আর্টিকেলের মধ্যে থাকা যেকোনো গ্রামাটিকাল ইরর এবং বানান ভুল শুধরে নিতে হেল্প করবে এটি। ফ্রি এবং পেইড দু’টি ভার্সন আছে। ফ্রিতে বেসিক ভুলগুলো ঠিক করা যায়, একটূ অ্যাডভান্সগুলোর জন্যে পেইড ভার্সনটি ব্যবহার করতে হবে।
পেইড ভার্সনটিকে এইসব বেসিক সুবিধার পাশাপাশি প্ল্যাগারিজম চেক করার সুবিধাও আছে।
এছাড়া কোন কারণে এটি ব্যবহার করতে না চাইলে জিঞ্জার, আফটার দ্য ডেডলাইন এর মত প্লাগইনও আছে। যা কাছাকাছি কাজ করে।
তবে আমি সাজেস্ট করবো অবশ্যই গ্রামারলি ব্যবহার করার জন্যে। শুধু নিশ সাইটই নয়, অনলাইনে যেখানেই আপনি ইংরেজিতে লিখবেন সেটার ভুল কারেকশনে এটি হেল্প করবে। এমনকি ফেসবুকেও।
লগইন লকডাউন – ইতোপূর্বে অনেকেই লিমিট লগইন অ্যাটেমপ্টস প্লাগইনটি ব্যবহার করে থাকতে পারেন। যা কিনা যথেষ্ট কার্যকরি। তবে দূর্ভাগ্যের বিষয় গত চার বছরে প্লাগইনটি আপডেট করা হয়নি। তাই এতোটা আউটডেটেড প্লাগইন ব্যবহার না করে প্রায় সিমিলার কাজ করে এমন একটি প্লাগইন আমি ব্যবহার করছি। এটি লগইন লকডাউন।
যদিও এই প্লাগইনটিও গত দুই বছরে একবারও আপডেট করা হয়নি, তাও আমি অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ছাড়ছিনা।
ভুল ইউজার নেইম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে বার বার কেউ লগইন করার চেষ্টা করলে এটি দিয়ে সেগুলো রুখে দেয়া সম্ভব।
সুকুরি – ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুকুরি দারুণ একটি প্লাগইন। নিরাপত্তার জন্যে বেসিক যে যে বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন তার সবগুলো হয়তো এভারেজ মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল হতেই পারে। সেক্ষেত্রে একটি নিরাপত্তা প্লাগইন আমাদের প্রয়োজন পড়েই।
চাইলে সুকুরি ব্যবহার না করে ওয়ার্ডফেন্স ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি সুকুরি প্রেফার করি। আর লগইন লকডাউন ব্যবহার না করে সুকুরির লগইন প্রোটেকশন ফিচারটাও ইউজ করা যেতে পারে।
ইয়োস্ট এসইও – অন পেইজ এসইওর বেসিক সবগুলো বিষয় খুব সহজেই মেইনটেইন করতে চাইলে ইয়োস্ট এসইও সবচেয়ে দারুণ একটি টুল। এটি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই। এটি যেকোনো ওয়েবসাইটের জন্যে লাগবেই এমনই একটি প্লাগইন। তবে কোন কারণে ইয়োস্ট ব্যবহার না করতে চাইলে অল ইন ওয়ান এসইও প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন।
দুইটাই ভালো, তবে আমি পার্সোনালি ইয়োস্ট প্রেফার করি।
আউটবাউন্ড লিঙ্ক ম্যানেজার – আপনার ওয়েবসাইট থেকে বাহিরে যে লিঙ্কগুলো যাবে সেগুলোকে বাছাই করে নোফলো করে দেয়ার জন্যে এটি কাজে আসবে। শুধু অ্যামাজন আর অ্যামাজন এর ইউ আর এল শর্টেরনার এর লিঙ্ক এখানে দিয়ে নোফলো করে দিলেই হবে। বাকি আউটবাউন্ড লিঙ্কগুলো ডুফলো রাখতে পারেন।
যেহেতু একই পেইজে অনেকগুলো অ্যামাজন এর অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে তাই এর সবগুলো ডুফলো থাকলে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই নোফলো করে দেয়া আরকি।
প্লাগইনটি দীর্ঘদিন আপডেট না হলেও যেহেতু শুধু নোফলো করে দেয়া ছাড়া এর আর কোন কাজ নেই, তাই কোন সমস্যা হবার কথা না।
ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাক আপ টু ড্রপবক্স – ওয়েবসাইট ব্যাকআপ এবং রিস্টোর করার জন্যে অসাধারণ প্লাগইন এটি। শিডিউল ব্যাকআপ সুবিধা আছে, ব্যাকআপ সরাসরি ড্রপবক্সে সেইভ করার সুবিধাও আছে এতে।
অল ইন ওয়ান স্কিমা রিচ স্নিপেটস – পোস্টের মধ্যে স্কিমা মার্কআপ ব্যবহার করতে চাইলে বেশ সহজেই এই প্লাগইন দিয়ে সেটি করা যাবে। খুব বেশি কাস্টোমাইজেশন করার সুযোগ নেই, কিন্তু বেসিক যা আছে, তা দিয়েও কাজ চালানো যাবে।
থ্রাইভ ক্লেভার উইজেটস – সাইডবারে রিসেন্ট পোস্ট, পপুলার পোস্ট এবং রিলেটেড পোস্ট দেখানো যায় এই প্লাগইন দিয়ে। যদিও সিমিলার ফাংশন কোন প্লাগইন ছাড়াও করা যায়, আমার এটি বেশ ভালো লাগে। খুব একটা ঝামেলার কিছু নেই, কয়েক ক্লিকেই থাম্বনেইল সহ পোস্টগুলো দেখানো যায়।
এগুলোই আমার বেসিক প্লাগইন, এর বাহিরে খুব একটা প্লাগইন আমি ব্যবহার করিনা। ব্যবহার করলেও ওগুলো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না।
আমি যে থিম এবং প্লাগইনগুলোর নাম বলেছি এর বাহিরে আর কোন থিম এবং প্লাগইন আপনার ভালো লাগে? কেন? কমেন্টে জানান।